Sunday, February 9, 2014

দাড়িওয়ালা বয়োবৃদ্ধ দোকানদারনে উদ্দেশ্য করে হাটহাজারী ইউএনও ইশরাত জাহান পান্না’র হুঁশিয়ারী-
“দাঁড়ি চাইচ্যা ফেলাইয়া দিমু”

“এই এই দোকনটা কার? একদম ব্লেড দিয়া দাঁড়ি চাইচ্যা ফেলাইয়া দিমু, এগুলো কি তোর বাপের জায়গা, লজ্জা করে না।” ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান পান্না গত শুক্রবার ( ৭ ফেব্র“য়ারি) সকালে উপজেলার মদুনাঘাট এলাকায় একজন দাঁড়িওয়ালা মুসলীম ব্যবসায়ীকে এভাবে দাঁড়ি কামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এসময় তিনি উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে নিজে লাঠি দিয়ে আঘাত করে আহত করেন। স্থানীয়ভাবে ধারণ করা অভিযান পরিচালনা করার এই ধরণের একটি ভিডিও দৃশ্য নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এই ভিড়িওটি এখন এলাকার মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছে। ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেট, ফেইসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। অথচ বিষয়টিকে গোপন করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের মামলার হুমকি দিয়ে ঘটনার দিন রাত ৮ টায় সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা এক প্রকার মামলার ভয়ে ভীত হয়ে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছে না। ইউএনও’র উচ্ছেদের নামে ব্যবসায়ীদের পিটানোর ঘটনায় এলাকার জনগণ ও ব্যবসায়ী মহলে সমালোচনা ঝড় উঠেছে।
এদিকে ঘটনার দিন ইউএনও’র উচ্ছেদের সময় স্থানীয়ভাবে তোলা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ইউএনও নিজেই দোকানপাঠ খালি করতে তার সাথে থাকা ফোর্সদের নির্দেশ দিচ্ছেন। এতে তিনি নিজেই বিভিন্ন দোকানপাটে প্রবেশ করে মালামাল নষ্ট করছেন। লোকজনকে নিজেই লাঠি হাতে ধাওয়া দিচ্ছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ লোকমান হাকিমকে মালামাল বাইরে রাখছেন কেন তা জানতে চাওয়ার একপর্যায়ে ইউএনও ক্ষুব্দ হয়ে হুমকি দিয়ে বলেন “এই এই দোকনটা কার? একদম ব্লেড দিয়া দাঁড়ি চাইচ্যা ফেলাইয়া দিমু, এগুলো কি তোর বাপের জায়গা, লজ্জা করে না।” এতে ওই ব্যবসায়ী দাঁড়ি নিয়ে এমন মন্তব্যের কারণ জানতে চাইলে ইউএনও তাকে বলেন, “বেশী বেয়াদবি করিস না”। এরপর ইউএনও অন্য দোকানে অভিযান চালাতে অগ্রসর হন। একপর্যায়ে ইউএনও আরো সামনে অগ্রসর হয়ে বৃদ্ধ সামশু সওদাগরকে মালামাল কুঁড়াতে দেখে তার উপর লাঠি দিয়ে আঘাত করতে করতে মাটিতে ফেলে দেন। ১১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে এই ভিডিও চিত্রে সালোয়ার কামিজ পড়া ইউএনও ঠিক ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে তার এমন দাঁড়ি নিয়ে হুঁশিয়ারী দৃশ্য ধরা পড়ে। আবার ভিডিও এর শেষ দিকে ১১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড থেকে ধরা পড়ে সামশু সওদাগরকে লাঠি দিয়ে পিঠিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়ার দৃশ্য।
এদিকে ঘটনাটি মিলমিশ করতে শুক্রবার রাতে হাটহাজারী মডেল থানায় মদুনাঘাট বাজার কমিটির সাথে পুলিশ ও ইউএনও’র প্রতিনিধি হিসেবে সহকারি কমিশনার (ভূমি) সামশুজ্জামানের বৈঠক হয় বলে সূত্র জানায়। এতে বিষয়টিকে গোপন করে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর একটি বৈঠক পূণরায় হবে বলে জানানো হয়।
সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা ঘটনার বর্ণনা দেন। তারা এসময় ইউএনও কর্তৃক লাঞ্চিত ও প্রহৃত হওয়ার কথা জানান। তবে তারা পুলিশী হয়রানী হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ইউনুচ সওদাগর (৬০) কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ইউএনও অতর্কীতভাবে আমার দোকানে প্রবেশ করে আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। আমি এর বিচার আল্লাহর কাছে চাই।
মোঃ লোকমান হাকিম জানান, আমি একজন মুসলমান। তিনি আমাকে উচ্ছেদের সময় শত শত লোকের সামনে আমার দাঁড়ি ব্লেড দিয়ে কামিয়ে ফেলার হুঁমকি দেন। তিনি এসময় আরো বলেন, আমার কোন অপরাধ থাকলে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন । কিন্তু তিনি আমার দাঁড়ি নিয়ে মন্তব্য করে আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কেন আমাকে অপমান করেছেন?।”
মূলত গত শুক্রবার হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান পান্না জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রভাতি দেব এর সাথে হালদা নদীর উরকিরচর এলাকায় বালি উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে গত শুক্রবার উপজেলার মদুনাঘাট বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটান। এসময় ইউএনও জনার্কীর্ণ ওই বাজারের বিকিকিনি চলার সময় জেলা মৎস্য কর্মকর্তার গাড়ী থেকে নেমে ব্যবসায়ীদের উপর চড়াও হন তিনি। ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ মালামাল নষ্ট করে উচ্ছেদ কাজ চলার এক পর্যায়ে তিনি ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনরোষে পড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এসময় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাটিতে পড়ে সামান্য আহত হন। উত্তেজিত জনতা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার গাড়ী ভাঙচুর চালায়। এসময় ওই গাড়ী চালক খোরশেদও আহত হন। তাছাড়া ইউএনও কর্তৃক স্থানীয় ব্যবসায়ী ইউনুস সওদাগর ( ৬০), আবছার (৫৫) , ফল বিক্রেতা মোঃ সোহেল, পানের দোকানদার সামশু সওদাগর (৭০), সবজি বিক্রেতা মোঃ হারুণ, ডিম বিক্রেতা রফিক, ব্যবসায়ী মোঃ মুছাসহ বাজার সমিতির সভাপতি নুর আলমও ও নুর নবী নামে এক পুলিশ সদস্য আহত হন।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান পান্না’র চরম ইসলাম অবমাননার ভিডিও দেখুন...
https://www.youtube.com/watch?v=hf8LRbOEiMk&feature=youtube_gdata_player


No comments:

Post a Comment