Tuesday, July 8, 2014

বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি মামলা রায়ে দুই দেশই বিজয়ী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি মামলায় উভয় দেশই বিজয়ী হয়েছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

মঙ্গলবার দুপুর ২টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

সোমবার নেদারল্যান্ডের দ্য হেগ- এর সালিশি ট্রাইব্যুনাল (Arbitral Tribunal) বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপান অঞ্চলে বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম অধিকার সুনিশ্চিত করে বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নির্ধারণী মামলার রায় ঘোষণা করে।

ট্রাইব্যুনালের রায় পর্যালোচনাপূর্বক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ঘোষণা করেন ‘এই রায় উভয় রাষ্ট্রের বিজয় নিশ্চিত করেছে। এই বিজয় বন্ধুত্বের বিজয়। এই বিজয় বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের বিজয়। কেননা, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে এটি এমন একটি বিদ্যমান সমস্যা হিসেবে ছিল, যা উভয় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে অবশেষে এর নিষ্পত্তি হলো।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনগত প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের বিরাজমান এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে ভারতের সদিচ্ছাকে এবং ট্রাইব্যুনালের রায় মেনে নেওয়ার জন্য আমরা ভারত সরকারকে সাধুবাদ জানাই।’

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে বিরাজমান সমস্যা অবশেষে আন্তর্জাতিক সালিশি ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ সমাধান উভয় রাষ্ট্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সমুদ্রবিষয়ক ক্ষেত্রে সমঝোতা ও সহযোগিতার সম্পর্কে এক নতুন দুয়ার খুলে দেবে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘এখন থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপানে বাংলাদেশের অবাধ প্রবেশাধিকার সুরক্ষিত হলো। গভীর সাগরে মৎস্য আহরণ, সমুদ্রের তলদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ পুষ্টির উৎস, সম্পদ এবং কর্মসংস্থানের জন্য সমুদ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সমুদ্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এই রায়ের স্বচ্ছতা ও আইনগত নিশ্চয়তার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের জনগণ গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে লাভবান হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বরেন, ‘এ রায়ের ফলে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্রগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাইবুনাল বিরোধপূর্ণ আনুমানিক ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকার মধ্যে ১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার  সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশকে প্রদান করেছে।’

২০১৩ সালের ০৯ই ডিসেম্বরে দ্য হেগ এর পিস প্যালেসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নির্ধারণ মামলার মৌখিক শুনানিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন ডা. দীপু মণি, এজেন্ট, মো. শহিদুল হক, পররাষ্ট্র সচিব এবং রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম (অব.), সচিব, মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট (ডেপুটি এজেন্ট)।

বাংলাদেশের পক্ষে বৈদেশিক কৌসুলি হিসেবে ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পল রাইখলার এবং লরেন্স মার্টিন, যুক্তরাজ্যের প্রফেসর জেমস্ ক্রফোর্ড, ফিলিপ স্যান্ডস এন্ড এলান বয়েল এবং কানাডার প্রফেসর পায়াম আখাভান।

সালিশি ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে ছিলেন, জার্মানির রুডিজার উলফ্রাম (প্রেসিডেন্ট), ফ্রান্সের জ্যাঁ-পীয়েরে কট, ঘানার টমাস এ. মেনশাহ, অস্ট্রেলিয়ার প্রফেসর আইভান শীয়ারার এবং ভারতের ড. প্রেমারাজু শ্রীনিবাসা রাও।

পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট  ট্রাইব্যুনাল রায় দেন, সমদূরবর্তী পদ্ধতিতে দুই দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা হলে বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী তা ন্যায্যতা নিশ্চিত করে না।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী রাষ্ট্রাধীন অঞ্চলে, একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে এবং মহীসোপানের সমুদ্র সীমানা নির্ধারণের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ সমুদ্র আইন কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সালিশি ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমার ও ভারত-এর অনুকূলে সালিশি নোটিশ দেয়।

২০১২ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণী সংক্রান্ত একই ধরনের মামলার নিষ্পত্তি হয়। জার্মানির হামব্যুর্গে অবস্থিত International Tribunal for the Law of the Sea (ITLOS) এর ২১ সদস্যবিশিষ্ট বিচারক পর্ষদ মিয়ানমার প্রস্তাবিত ‘সমদূরত্ব’ পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করে ‘ন্যায্যতা’র ভিত্তিতে বাংলাদেশের অনুকূলে রায় দেয়। এতে করে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে অমীমাংসিত ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপান অঞ্চলে ন্যায্য হিস্যা লাভ করে।

২০১৪ সালের সালিশি ট্রাইব্যুনালের রায় উভয় রাষ্ট্রের নিজ নিজ সমুদ্র সীমানা চিহ্নিত করে দিয়েছে, যার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই। এই রায়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত বাংলাদেশের মামলার পরিসমাপ্তি ঘটলো।

শীর্ষ নিউজ ডটকম/বিজ্ঞপ্তি/এফইউ/একেএ
- See more at: http://www.sheershanews.com/2014/07/08/43808#sthash.mbPU810h.dpuf

No comments:

Post a Comment