আদিবাসী দিবস উপলক্ষে সিলেটে একটি আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের 'খবিশ' 'চরিত্রহীন' 'লম্পট' মন্তব্য করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী। এ ছাড়া তিনি নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন।
বিকেলে নগরের সুরমা পয়েন্টস্থ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন। মঞ্চে ওঠেই তিনি মাইক নিয়ে সাংবাদিকদের অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকরা সেখানে থেকে গেলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সেখানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের নানাভাবে ভর্ৎসনা করেন। সিলেট বিভাগীয় আদিবাসী উদযাপন কমিটির এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
একপর্যায়ে তিনি 'খবিশ' ও 'চরিত্রহীন' বলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করলে উপস্থিত সাংবাদিকরা অনুষ্ঠান বয়কট করেন। এ সময় মিলনায়তনে হট্টগোল শুরু হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে মন্ত্রী বক্তৃতা শেষ করতে গিয়েও সাংবাদিকবিহীন মিলনায়তনে আবারও সাংবাদিকদের আক্রমণ করে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে সিলেটের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ বিশেষ অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথিদের বক্তৃতা পর্ব শেষে ৬টার দিকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বক্তৃতা শুরু করেন। বিষয় বস্তু আদিবাসী নিয়ে হলেও প্রায় ৪০ মিনিট বক্তৃতায় তিনি ঘুরে ফিরে সাংবাদিকদের নানা রকম অশ্লীল শব্দ প্রয়োগে আক্রমণাত্মক বক্তৃতা দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তাঁকে আহ্বান করা মাত্র তিনি মাইক্রোফোনের সামনে এসে সাংবাদিকদের সরে যেতে বলেন। এ সময় তিনি 'সর সর...' বলেন। একপর্যায়ে 'তোমাদের মুখ দেখতে আসি নাই...' বলে সাংবাদিকদের মাইক্রোফোনের সামনে থেকে ক্যামেরা নিয়ে চলে যেতে বলেন।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন- 'সাংবাদিকদের ঠিক করতে নীতিমালা হয়েছে। ওই দিন কেবিনেট মিটিংয়ে আমি থাকলে সাংবাদিকদের .... (অকথ্য শব্দ) দিয়ে বাঁশ ঢুকাতাম। সাংবাদিকদের এখন এমনভাবে ঠিক করা হবে যাতে নিজের স্ত্রীকে পাশে নিয়েও শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না। সাংবাদিকরা বদমাইশ, চরিত্রহীন, লম্পট।'
মন্ত্রিত্বর পরোয়া করেন না এমন দম্ভোক্তি করে মহসিন আলী বলেন 'মন্ত্রিত্ব থাকলেই কী, আর না থাকলে কী? জনগণ আমাকে ভালোবাসে, আমিও জনগণের ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে চাই।'
সাংবাদিকরা অল্পশিক্ষিত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন 'আমার মেয়ে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স। আর যারা পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে লেখালেখি করে তারা দু-এক কলম পড়ালেখা করেছে। আমি বলি একটা, তারা লিখে আরেকটা। দুই টাকা খেয়ে তারা আমার ... (অকথ্য শব্দ) দিয়ে বাঁশ ঢুকাতে চায়। আমার শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। সাংবাদিকদের পেছনে সিলেটের মানুষ লেলিয়ে দিতে আমার সময় লাগবে না। সাংবাদিকরা আমার ... (অকথ্য শব্দ) ছিঁড়তে পারবে না।'
মন্ত্রী বক্তৃতার একপর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে 'খবিশ' ও 'চরিত্রহীন' বলে ভর্ৎসনা করেন। তিনি বলেন, 'এরা সবটা খবিশ, চরিত্রহীন! স্বাধীন কমিশন হলে পরে দেখ নেব- তোমরা (সাংবাদিকরা) কতটুকু যেতে পার!'
সমাজকল্যাণমন্ত্রী যখন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, পেছনে অনেকটা বিব্রত ভাব নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মন্ত্রীর এপিএস সাইফুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠান শেষে জানতে চাইলে মন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'মন্ত্রীর বক্তৃতাকে বিকৃত করে এর আগে কয়েকটি পত্রিকা রিপোর্ট করায় মন্ত্রী ক্ষুব্ধ ছিলেন। সাংবাদিকরা সামনে এটা দেখে সেই ক্ষোভে মন্ত্রী কিছু কথা বলে ফেলেছেন। বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক!'
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সরকারের এক তথ্যবিবরণীতে বলা হয়, দেশে কোনো আধিবাসী নেই। যে আলোচনা সভা, টকশো কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে 'আধিবাসী' শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু সরকারের একজন মন্ত্রী হয়ে মহসীন আলী 'আধিবাসী' অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের ভর্ৎসনা করলেন।
No comments:
Post a Comment